Ad Code

Responsive Advertisement

বেলেডোনা Belladonna

 “বেলেডোনা” এটি একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন



বেলেডোনা

নিচে বেলেডোনা মেডিসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপনা করা হলো ঃ


বেলেডোনার উৎসঃ-

বেলেডোনার উৎস হচ্ছে-উদ্ভিজ ।

বেলেডোনার প্রাকৃতিক আবস্থানঃ-

বেলেডোনার প্রাকৃতিক অবস্থান হলো - সোলানেসী গোত্র।

বেলেডোনার প্রুভারঃ- 

মহত্না ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ঔষধ টি প্রূভ করেন। 

বেলেডোনার প্রতিনাম বা সমনামঃ- 

            • ডেইলি নাইট শেড
            • বিউটিফুল লেডি
            • অ্যাট্রোফা
            • বেলেডোনা
            • বেলেডোনা বেক্সিফেরা
            • সোলেনাম মিউরিউসাম
            • টলক্রাউট

বেলেডোনার উদ্ভিদ বা গাছের প্রাপ্তিস্থান ঃ-

সাধারণত বেলেডোনার উদ্ভিদ গুলো ইউরোপে বিশেষত গ্রীস, ইতালি ও ব্রিটেনে ধ্বংসাত্বক বা পরিত্যক্ত স্থানে জন্মে। ভারতের হিমালয় পূর্বাঞ্চলের ছয় হাজার থেকে বারো হাজার ফুট উচু স্থানে  ( সিমলা থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত) ইহা প্রচুর পরিমাণে জন্মে। কোলাওয়ারের সারে আট হাজার ফুট উচ্চ স্থানের বনাঞ্চলেও ইহা জন্মে ও পাওয়া যায়। 

বেলেডোনা গাছের বর্ণনা ঃ-

এট্রোফা বেলেডোনা মোটা কান্ড ও পুরু শাখা বিশিষ্ট এক প্রকার বিষাক্ত জাতের বহু বর্ষ জীবী মোটা বৃক্ষ বা উদ্ভিদ বা গাছড়া। ইহা তিন থেকে সাত ফুট উচ্চতায় হয়। ইহার পাতাগুলি পরিবর্তন শীল,  প্রায় ই জোরায় জোরায় পাতা হয়। একটি পাতা বড় ও একটি পাতা ছোট। পাতার রং সবুজ অথবা বাদামী সবুজ বা নীলাভ সবুজ। খাটো বোটা বিশিষ্ট, পাতা লম্বায় তিন থেকে নয় ইঞ্চি হয়। ডাটা কিছুটা ফাঁপা ও চ্যাপ্টা, তরুণ অবস্থায় গুচ্ছ সুশোভিত। 

বেলেডোনা ঔষধের প্রস্তুত প্রণালীঃ-

এট্রোফা বেলেডোনা গাছে সম্পূর্ণ ফুল ফোটার প্রাক্কালে গাছের মূল, কান্ড, পাতা, ফুলসহ সম্পূর্ণ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, রসের সাথে সম পরিমাণ বিশুদ্ধ সুরাসার সহযোগে হোমিওপ্যাথি ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুসারে মূল আরক বা অরিষ্ট মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়। 

বেলেডোনাকে যে কারণে সুন্দরী মহিলা বলা হয়ঃ- 

বেলেডোনা দ্বারা সুন্দরী মহিলাদের মুখের ছোট ছোট দানা দূর করা হতো, তাই ইহাকে সুন্দরী মহিলা বলা হতো। ইহা ছাড়া ইটালীর বিখ্যাত বিষ ব্যবহার কারী লিউপোটা কতৃক ইহা ব্যবহার হতো। সুন্দরী মহিলাদের ধ্বংস বা মারার জন্য লিউপোটা ব্যবহার করতেন।

বেলেডোনা ঔষধ দেহের যে সকল অঙ্গে কাজ করেঃ- 

দেহের ডান দিকের পীড়ায়, মস্তীস্ক ও স্নায়ু মন্ডলীর উপর বেলেডোনার ক্রিয়া সর্বাধিক । এছাড়া রক্তনালী, কৈশিকনালী, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী , বিভিন্ন গ্রহ্রি, ‍চোখ, মুখ, গলা, চর্ম, হ্রদপিন্ড ও ফুসফুস ইত্যাদির উপর ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করে।

বেলেডোনার দৈহিক কাঠামো বা ধাতু প্রকৃতি বা ধাতুগত লক্ষণঃ-

  1. বেশ হ্রষ্ট-পুষ্ট, বলিষ্ট, মোটা মাংসল, রক্ত প্রধান রস প্রধান, পিত্ত প্রধান, সর্দি প্রবণ, শীত কাতর, সোরারোগ গ্রস্থ, টিউবার কুলার, ধী শক্তিমান ব্যক্তিরাই বেলেডোনার ধাতু বিশিষ্ট।
  2. পাতলা কেশ, সুন্দর চেহারা, নীল চোখ ও ফুলা, মাথা গরম, হাত পা ঠান্ডা, বালিশে মাথা গোজে।
  3. যাহারা সুস্থাবস্থায় রসিক, কৌতুক প্রিয়, হাঁসি ‍খুশি ও প্রফুল্ল থাকে ও আমোদ প্রমোদে মত্ত থাকে, কিন্তু সামান্য অসুস্থতায় অত্যন্ত উত্তেজিত ও কৃপন স্বভাব, অধীর ও ভয়ানক কাতর হয়ে পড়ে।
  4. যে সকল বালকদের মস্তক বড়, দেহ ক্ষুদ্র, দেহ গন্ডমালা বৃদ্ধি দেখা দেয়।

বেলেডোনার রোগী যে কারণে প্রাকৃতিক ভাবে রোগাক্রান্ত হয়ঃ-

  • রোগী মাথার চুল ছাটানোর কারণে বা মাথা মুন্ডিলে মাথায় ঠান্ডা লেগে রোগ হতে পারে। 
  • মাথায় ঠান্ডা জ্বর, বৃষ্টির পানি বা বরফ বা তুষার পাতের পানি লাগার কারণে। 
  • মাথা খোলা রাখার কারণে প্রচন্ড ঠান্ডা খোলা বাতাসে। 
  • ঠান্ডা পানীয়, বরফ পানীয় বা সাধারণত পানিতে গোসলকরে মাথা ভিজা থাকার কারণে রোগ হতে পারে। প্রখর রৌদ্রের তাপে ঘোরাফেরা বা হাটাহাটির কারণে কোন পীড়া হতে পারে। 

বেলেডোনার অনুপূরক ঔষধ গুলোঃ-

            1. একোনাইট 
            2. ক্যালকেরিয়া কার্ব 
            3. হিপার সালফার 
            4. ল্যাকেসিস 
            5. মার্কসল 
            6. পালসেটিলা 
            7. সাইলেসিয়া ইত্যাদি। 

বেলেডোনার ক্রিয়ানাশক বা প্রতিষেধকঃ-

            1. অ্যাকোনাইট 
            2. ব্রাইয়োনিয়া 
            3. ক্যাম্ফর 
            4. কফিয়া 
            5. হিপার সালফার 
            6. হাইয়োসায়ামাস
            7. মার্কসল 
            8. ওপিয়াম 
            9. পালসেটিলা 

জ্বরে বেলেডোনার লক্ষণাবলীঃ- 

বেলেডোনার জ্বরে নাড়ীর গতি দ্রুত ও স্থূল,  সন্ধ্যায় দেহে অত্যন্ত গরম, তবু ও শীত শীত মনে করে, এতো শীত অনুভূত হয় যেন আগুনের তাপেও শীত কমে না তাই রোগী শীতকাতর। জ্বর হঠাৎ আসে এবং প্রচন্ড ভাবে কষ্টকর লক্ষণের সাথে অনেক ক্ষণ বর্তমান থাকে পরে হঠাৎ জ্বর কমে। জ্বর বেরে গেলে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় এবং দেহত্বক এত গরম, স্পর্শ করলে হাত যেন প্রায় পুরে যাবে

প্রদাহ জনিত জ্বরে রোগীর দেহের ভিতরে এবং বাহিরে প্রচণ্ড অন্তর্দাহ ও জ্বালা খুব পিপাসা এবং সাথে অস্থিরতা। উত্তাপের সাথে রোগীর মাথায় ও মুখমণ্ডলে উত্তপ্ত ঘাম হয়। এই ঘাম বিন্দুগুলী রোগীর কপালে মালার মতো দেখায়। এই উত্তাপ ও ঘাম বেলেডোনার লক্ষণ। উত্তাপ, আরত্তিম ও জ্বালা বেলেডোনায় নির্দিষ্ট ।রোগী সব সময় গরম থাকতে চায়। নড়াচড়ায় মাথা ব্যথা বাড়ে। 

চোখ ও মুখমণ্ডলে থমথমে লাল দেখায়। রোগী ঘুমালে ভয়ানক বস্তুর স্বপ্ন দেখে, কাল্পনিক মূর্তদেখে, চমকিয়ে উঠে ও প্রলাপ বকে দাঁত কটমট করে, অন্যের গায়ে থুতু দেয়, বিছানা ছেড়ে, কিছু ধরতে চায়, কাপতে থাকে, ভয় পায়, দ্রুত কথা বলে ও কেঁদে ফেলে। লেবুর রস বা টক দ্রব্য, ফল খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা। 

বেলেডোনার রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি বা উপচয়ঃ- 


স্পর্শে, দেহ সঞ্চালনে বা নড়াচড়ায়, মাথার চুল ছাটালে, মাথায় ঠান্ডা বা শীতল পানি বা বাতাস লাগলে, সামান্য শব্দে, মাথা খোলা রাখলে, প্রখর সূর্যের কিরণে বা রৌদ্রে,ব্যথা যুক্ত পার্শ্বে শয়নে, উজ্জ্বল আলোতে বা চকচকে জিনিসের দিকে তাকালে, ঘাম বসে গেলে, হঠাৎ দাঁড়ালে, দেহ বা মাথা ঝাঁকানিতে ,মাথা সামনের দিকে নোয়ালে, গোলমাল বা গন্ডগোলে, বৈকাল তিনটার পর, আবার মধ্যরাত্রির পর ইত্যাদিতে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি। 


বেলেডোনার রোগ লক্ষণের হ্রাস বা উপশমঃ-


          • গায়ে কাপড় জরিয়ে রাখলে। 
          • মাথা ঢেকে রাখলে। 
          • পিছনের দিকে হেলিয়া রাখলে। 
          • বিছানায় বিশ্রামে বা বিশ্রাম কালিন সোজা হয়ে দাঁড়ালে। 
          • অর্ধ শায়িত অবস্থায় মাথা উপরের দিকে রাখলে। 
          • গরম ঘরে ও অন্ধকারে থাকলে রোগ লক্ষণের উপসম হয়।

 

বেলেডোনার সারমর্মঃ-

বেলেডোনার সব রোগ হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়। 

পীড়াস্থল জ্বালা পোড়ায়, গরম আর লাল হয়।

পীড়াস্থান স্পর্শে ভয়, রোগী শীতকাতর হয়।
 
দেহের নীচের অংশ শীতল রয়, উপরের অংশ গরম হয়।

মুখমণ্ডল লাল রয়,শুইলে তবে ফ্যাকাশে হয়।

যত রোগ যন্ত্রনা, মাথায়যেন কেন্দ্রীয় ভূত হয়।

আকস্মিক রোগ লক্ষণ, প্রবল ও ভীষণ হয়। 

রোগ বাড়ে সূর্যের আলোতে, মাথা নোয়ায়।

চুল ছাটিলে, স্পর্শে শুয়ে, বাড়ে শীতলতায়। 

ঠান্ডা বাতাস পানিতে, বাড়ে যত রোগ লক্ষণ। 

রোগ অতি দ্রুত বাড়ে, কমতে লাগে ততক্ষণ। 




উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা বেলেডোনা মেডিসিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। আআমাদের আলোচনা থেকে যদি আপনারা কিছু উপকৃত হতে পারেন, তবেই আমাদের সফলতা, আমাদের সার্থকতা। 

বিশেষ প্রয়োজনে যোগাযোগ নিচের ঠিকানায়ঃ-




Post a Comment

1 Comments