আর্সেনিকাম অ্যালবাম এটি একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন
![]() |
আর্সেনিকাম |
নিচে আর্সেনিক অ্যালবাম মেডিসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপনা করা হলোঃ-
আর্সেনিক অ্যালবামের উৎসঃ-
আর্সেনিকাম অ্যালবাম এর উৎস হলো- খনিজ বা রাসায়নিক খনিজ।
আর্সেনিক অ্যালবাম এর প্রূভারঃ-
মহাত্মা ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান আর্সেনিক অ্যালবাম সর্ব প্রথম প্রূভ করেন।
আর্সেনিক অ্যালবাম এর উপনাম বা সমনামঃ-
সেকো বিষ, আর্সেনিক, আর্সেনিক ট্রাই অক্সাইড, এসিডাম আর্সেনিকাম, আর্সেনিয়াম অ্যাসিড, আর্সেনিক ব্লেন্স, সাদা আর্সেনিক ইত্যাদি। ( Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবাম এর বিবরণ ও ভৌত ধর্মের বর্ণনাঃ-
আর্সেনিকের ধাতব পদার্থ ঝলসিয়ে অর্থাৎ আর্সেনিক ধাতব এবং অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক অ্যালবাম পাওয়া যায়। ইহাকে উত্তাপের সাহায্যে পুনরায় বাষ্পে পরিণত করে আবার কঠিন করা হয় এবং উৎপন্ন দ্রব্যকে বিশুদ্ধ করা হয়। ইহা সাদা ভারী বিচূর্ণ পদার্থে রুপলাভ করে অথবা ছোট বড় পিন্ড যে অবস্থাতেই থাকে তা ভাঙ্গা কাঁচের মতো স্ফটিক আকারে থাকে। আর্সেনিকাম অ্যালবাম 99-8%- এর কম থাকে না। ইহা ঠান্ডা পানিতে খুব ধীরে দ্রবণীয়, কিন্তু অ্যাসিড বা অ্যাকোহলে সামান্য পরিমাণে দ্রবণীয়। এলকালি, হাইড্রোজেন অক্সাইড, গরম পানি ও গ্লিসারিনে ইহা দ্রবণীয়। ইহার জলীয় দ্রবণে হলদে তলাণী সৃষ্টি হয় যার মধ্যে হাইড্রোজেন সালফাইড বর্তমান থাকে না। ইহা তীব্র বিষাক্ত একটি পদার্থ। ( Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবাম ঔষধের প্রস্তুত প্রণালীঃ-
দশমিক ও সাধারণ পদ্ধতি- এক ভাগ ওজনের আর্সেনিক ট্রাই অক্সাইড এবং নিরানব্বই ভাগ ওজনের পরিসূত সুরাসার দ্রবীভূত করে ইহার মূল অরিষ্ট বা মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়।
উত্তাপ ও বিক্রিয়ার সাহায্যে- ছিয়ানব্বই গ্রেণ আর্সেনিক ট্রাই অক্সাইড এবং বিশ আউন্স পরিসূত বা ডিসট্রিল পানিতে একত্রে নিয়ে তাপ দিলে পানি কমে যায় তখন পূর্বের পরিমাণে আবার পানি দিতে হয়। আবার তাপ প্রয়োগ করার পর সব অ্যাসিড বাষ্পাকারে উড়ে গিয়ে পাত্রে শুধু 15 আউন্স পানি থাকতে নামিয়ে ঐ পানি শীতল করতে হয়। শীতল পানিতে পরিসূত সুরাসার মিশিয়ে এক পাইন্ট করতে হয়। ইহা আর্সেনিক অ্যালবাম এর টু-এক্স অথবা এক শক্তি। হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুসারে উচ্চ শক্তির ঔষধ তৈরী করতে বিশুদ্ধ সূরাসার ব্যাবহার করা হয়। ( Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবাম এর প্রস্তুতের ফর্মূলাঃ-
আর্সেনিক অ্যালবাম এর প্রস্তুতের ফর্মূলা হলো- এফ-৬ (অরিষ্ট) এবং এফ-৭ (বিচূর্ণ)।
আর্সেনিক অ্যালবের কাঁচামালের প্রাপ্তিস্থানঃ-
আর্সেনিক অ্যালব কেমিক্যাল দ্রব্য বিক্রয়কারীর দোকানে পাওয়া যায়। আর্সেনিক ধাতব খনিতে অনান্য পদার্থের সাথে পাওয়া যায়। (Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবাম এর ক্রিয়াস্থল বা ক্রিয়াস্থানঃ-
শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি, মন, মস্তিষ্ক, শ্বাসযন্ত্র, পরিপাক তন্ত্র, স্নায়ু মন্ডলী বিশেষত: নিউমোগ্যাষ্টিক ও ভ্যাসোমোটর স্নায়ু, মূত্র যন্ত্র, হ্রদপিন্ডে, প্লীহা, নাসিকা গ্রন্হি, মাংস পেশী, চর্ম ও দেহের ডান দিকে বিশেষ ক্রিয়া প্রকাশ করে। (Arsenicum Album )
যে ধরনের রোগের ক্ষেত্রে আর্সেনিক অ্যালব প্রয়োগ করা হয়ঃ-
- শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি, মস্তিষ্ক ঝিল্লি, চর্মের প্রদাহ বিশিষ্ট জ্বালা জনক বিভিন্ন পীড়া।
- আমাশয়, চোখের রোগ, উদরাময়, টাইফয়েড জ্বর, সাধারণ জ্বর, কলেরা।
- ডিম্বাশয়ের পীড়া, রজ:স্রাব, এলবুমেনুরিয়া ও মৃগী ইত্যাদি রোগে আর্সেনিক অ্যালব প্রয়োগ করা হয়।
- তাছাড়া অমিতাচার, অপুষ্টিকর আহারবশত: ও কুইনাইনের অপব্যবহার জনিত দুর্বল গ্রস্থ ব্যক্তি।
- জীবনী শক্তির ঘন ঘন অবসাদ, সর্বাঙ্গের অবসতা ও শীর্ণতা, অন্ত্রপথের উগ্রতা ইত্যাদি পীড়া গ্রস্থ রোগী ইহার প্রয়োগ ক্ষেত্র। (Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবের ধাতুগত লক্ষণঃ-
- আর্সেনিক ঔষধ টি এন্টিসোরিক, এন্টিসিফিলিটিক, শীতকাতর এবং স্কুফুলাস ধাতুর।
- যে সব রোগীর দৈহিক গঠন হালকা পাতলা।
- আর্সেনিকের রোগী অমিতাচার, অপুষ্টিকর আহারবশত ও কুইনাইনের অপব্যবহার জনিত দুর্বল গ্রস্থ ব্যক্তি।
- যে সব ব্যক্তির জীবনী শক্তির ঘন ঘন অবসাদ, সর্বাঙ্গের অবসতা ও শীর্ণতা, অন্ত্রপথের উগ্রতা ইত্যাদি লক্ষণ সম্পন্ন পীড়া গ্রস্থ রোগী।
- যে কারণে প্রাকৃতিক ভাবে আর্সেনিকের রোগী আক্রান্ত হয়-
- রোগী অধিক মদপান বা সুরাপান করলে।
- অনেক দিন মুখে বা দাঁতে গুল দিলে বা ব্যবহার করলে।
- রক্ত সল্পতা বা এনিমিয়া হলে।
- রোগী সমুদ্র তীরে বসবাস করলে।
- রোগী সবসময় রসালো ফল খাওয়ার কারণে।
- পচা বাসী খাদ্য দ্রব্য, ফলমূল বা রান্না করা খাদ্য খাওয়ার কারণে।
- পচা ও অতিষ্ঠ দুর্গন্ধ যুক্ত গন্ধ নেওয়ার কারণে।
- অতিরিক্ত আইসক্রিম খাওয়ার ফলে। (Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালব সেবন কালে যা পানাহার করা নিষেধঃ-
ঠান্ডা পানীয়, টক দ্রব্য বা খাদ্য বা পানীয়, ফল বা টক ফল, মদ বা সূরা, গোসত, তামাক, আখের রস ও মধু ইত্যাদি। (Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবাম এর উপচয় বা বৃদ্ধিঃ-
- ঠান্ডায় ও ঠান্ডা পানাহারে, কাশি বেথা বেদনা, বাত হাঁপানি, শির ঘূর্ণয়ন, উদরাময় ইত্যাদি বৃদ্ধি।
- কাশি - শয়নে বৃদ্ধি, দ্বিপ্রহরে অর্থাৎ দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে।
- মধ্য রাত্রিতে ১টা থেকে রাত্রি ৩টার মধ্যে।
- আক্রান্ত পার্শ্বে শয়নে, মাথা নিচু করে শয়নে।
- বর্ষা কালে এবং সমুদ্র তীরে বৃদ্ধি। (Arsenicum Album )
আর্সেনিক অ্যালবাম এর উপশম বা হ্রাসঃ-
- গরম প্রয়োগে, গরম খাদ্য ও পানীয়।
- মাথা উচু করে শয়নে।
- লোক সঙ্গে থাকলে।
- সামনের দিকে নত হলে।
- শির পীড়ায় ও মাথা ব্যথায়।
- ঠান্ডা বা ঠান্ডা প্রয়োগে এবং সঞ্চালনে উপশম।
আর্সেনিক অ্যালবের অনুপূরক বা সদূশ ঔষধের নামঃ-
- অ্যালিয়াম স্যাটাইভা
- অ্যালিয়াম সেপা
- এপিস মেল
- বেলেডোনা
- কার্বোভেজ
- ক্যামোমিলা
- চায়না
- ফেরাম ফস
- ইপিকাক
- নেট্রাম সালফ
- ফসফরাস
- পালসেটিলা
- রাস টক্স
- সিকেলি কর
- ট্যারেন্টুলা
- হিস্পা
- থুজা
যে সব অবস্থায় আর্সেনিক অ্যালব একটি অমোঘ ঔষধ হিসাবে কাজ করেঃ-
- রোগের আক্রমনের শুরুতেই রোগী দুর্বল হয়ে পরে, ফলে রোগীর মৃত্যু ভয় ও অস্থিরতা এবং অবসন্নতা। রোগ আরোগ্য হবার নয় এবং ঔষধেও কোন ফল হবে না , কাজেই মৃত্যু অনিবার্য ।
- উৎকন্ঠা তাই সাথে কাউকে রাখতে চায় না।
- স্রাব দুর্গন্ধ যুক্ত. অল্প ও ক্ষতকারক।
- খুব পিপাসা, বার বার অল্প অল্প করে পানি পান করে, তবে পানি পানে কাশির বৃদ্ধি।
- ঠান্ডা পানাহারের পর বমি।
- পীড়ায় বা ক্ষতস্থানে আগুনে পোড়ার মতো জ্বালা, উত্তাপে জ্বালার উপশম।
“উপরে উল্লেখিত লক্ষণে আর্সেনিক অ্যালব একটি অমোঘ ঔষধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।”
আর্সেনিক অ্যালবের মৃত্যু ভয়ের লক্ষণাবলীঃ-
রোগ আক্রমনের শুরুতেই রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে রোগীর মৃত্যু ভয় ও অস্থিরতা এবং অবসন্নতা। রোগ আরোগ্য হবার নয় এবং ঔষধেও কোন ফল হবে না , কাজেই মৃত্যু অনিবার্য । কিন্তু মৃত্যু ভয়ে আত্মহত্যাও করতে পারে না। (Arsenicum Album )
উপরে আর্সেনিক অ্যালব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এরপরেও যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করুনঃ-
2 Comments
GOOD
ReplyDeleteGOOD MEDICINE
ReplyDelete