অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম
“অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম” নিচে এই মেডিসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর প্রাকৃতিক অবস্থানঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর প্রাকৃতিক অবস্থান হচ্ছে-অ্যাপোসাইনেসী বা অ্যাপোসাইনাসিয়াই।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর সমনাম বা প্রতিনাম-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর সমনাম- ইন্ডিয়ান হেম্প, ব্লাক ইন্ডিয়ান হেম্প, আমেরিকান হেম্প, গাঁজা, সিদ্ধি, ভারতীয় শন বা পাট, প্রেডিং ডগসবেন, পিউবিসিনস, অ্যাপোসাইনাম হাইপোরিসিফলিয়াম-এ।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর উৎসঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম ঔষধে এর উৎস হলো-উদ্ভিজ।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম গাছের বর্ণনাঃ-
- ইন্ডিয়ান হেম্প বা আমেরিকান হেম্প গাছড়াটি এক প্রকার ফক জাতীয় গাছড়া।
- ইহার কান্ড প্রায় ৪-ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
- এই গাছটি দুগ্ধের মতো রসে বা কষে পরিপূর্ণ থাকে।
- পাতাগুলি সম্মুখবর্তী ও বৃন্তযুক্ত,২-থেকে ৩-ইঞ্চি লম্বা হয়।
- জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গাছে সবুজাত সাদা বর্ণের ফুল ফোটে।
- ফল গুলো কোষের মধ্যে আবৃত থাকে।
- ইহারা ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা ও দুদোল্যমান।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম গাছের প্রাপ্তিস্থানঃ-
এ সকল গাছড়া আমেরিকা ও কানাডার সর্বত্র পাওয়া যায়। এছাড়া এশিযার মধ্যে বাংলাদেশে, ভারতবর্ষের ঘন বন জঙ্গল এর নিকটে, ঝোপ ঝাড়ে এবং নদীর তীরে ও আদ্র ভূমিতে এ সকল গাছ জন্মে থাকে।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর প্রুভারঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর প্রুভার-অ্যাপোসাইনাম ক্যান ঔষধটি ইংল্যান্ডের ডাঃ ব্লাক এবং আমেরিকার ডাঃ জে. হেংরী ও ডাঃ মার্সি সর্ব প্রথম প্রুভ করেন।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর প্রস্তুত প্রণালীঃ-
ইন্ডিয়ান হেম্প বা আমেরিকান হেম্প নামক গাছের টাটকা সরস মূল সংগ্রহ করে রস নিংড়িয়ে ইহার মূলের রসের দ্বিগুণ ওজনের বিশুদ্ধ সুরাসার সহযোগে এই ঔষধের মাদার টিংচার বা মূল অরিষ্ট তৈরী হয়। পরে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুসারে বিশুদ্ধ সুরাসার সহযোগে ইহার বিভিন্ন শক্তির ঔষধ প্রস্তুত করা হয়।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম প্রস্তুতের ফর্মুলাঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর প্রস্তুতের ফর্মুলা- এফ-৩ (F-3)।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানাবিনাম এর ধাতুগত লক্ষণঃ-
- অ্যাপোসাইনাম ক্যানের সকল রোগ লক্ষণ ঠান্ডায় বৃদ্ধি।
- গরম প্রয়োগে উপসম, তাই অ্যাপোসাইনাম ক্যানের রোগী শীতকাতর।
- রোগীর শোথের সাথে প্রবল পিপাসা , কিন্তু ঠান্ডা পানি পান করলে বমি।
- রোগীর সহজে ঘাম হয় না।
- প্রস্রাব ঘর্মসহ সব স্রাব বন্ধ হয়ে সর্ব দেহে শোথ বা ফোলা।
- পর্যায়ক্রমে শোথ ও তরল ভেদ এবং প্রবল পিপাসা।।
- তন্ত্রালুতা ও শক্তিহীনতা
অ্যপোসাইনাম ক্যানের ক্রিয়াস্থল বা ক্রিয়াস্থানঃ-
মানব দেহের চর্ম, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি, জরায়ু, এলিমেন্টারি ক্যানেল, মূত্রতন্ত্র এবং কিডনী, সেরাস ঝিল্লি, লিভার এবং হ্রদপিন্ডের মাইট্রাল ও ট্রাইকাসপিড ভালব ইত্যাদির উপর ইহার প্রধান ক্রিয়া।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের বৈঞ্জানিক নামঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের বৈঞ্জানিক নাম- অ্যাপোসাইনাম ক্যান্যাবিনাম।
যে কারণে অ্যাপোসাইনাম ক্যানের রোগী প্রাকৃতিক ভাবে হয়ঃ-
- ঘর্ম , প্রস্রাব এবং দেহের যে কোন স্রাব বন্ধ হয়ে সর্ব অঙ্গ ফোলা বা শোথ।
- চর্ম, কিডনি সহ মূত্রতন্ত্র , অ্যালিমেন্টারী ক্যানেল , জরায়ুর বিশৃঙ্খলার কারণে শোথ।
- মদ খেয়ে তরুণ বিষক্রিয়া , উদরী, কষ্টকর প্রস্রাব ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন রোগ।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের বৃদ্ধি বা উপচয়ঃ-
ঠান্ডায়, ঠান্ডা প্রয়োগে, ঠান্ডা পানাহার করলে, শীতকালে, ঠান্ডা পাণিতে গোছল করলে, ঠান্ডা বা শীতল আবহাওয়ায়, খালি গায়ে থাকলে বা অনাচ্ছাদিত অবস্থায়, ঘুমের পর বৃদ্ধি।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের হ্রাস বা উপশমঃ-
গরমে, গরম প্রয়োগে, গরম পানাহার করলে, গরম বা উষ্ন আবহাওয়ায়, শয়ন করলে, এবং বসা অবস্থায় উপশম।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের সদৃশ্য বা তুলনীয় ঔষধঃ-
অ্যালোজ, এপিস মেল, আর্সেনিক, অ্যাসেটিক এসিড, কলসিকাম, ডিজিটেলিস, হেলিবোরাস ও পডোফাইলাম ইত্যাদি।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের অনুপূরক ঔষধঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের অনুপূরক ঔষধ হচ্ছে- এপিস মেল এবং আর্সেনিক অ্যালবাম।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের ক্রিয়ানাশক ঔষধঃ-
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের ক্রিয়ানাশক বা প্রতিষেধক ঔষধ হলো- ব্রাইয়োনিয়া, চায়না।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের শক্তিমাত্রার প্রয়োগ বা ব্যবহারঃ-
মাদার টিংচার (Q) সর্বোচ্চ ১০ ফোটা পর্যন্ত মৃদু গরম পানিতে ( দিনে ৩ বারের উর্ধ্বে নয় )। ৩ থেকে ২০০ শক্তি ও ব্যবহার করা যায়। তবে মূল আরকই অধিক ব্যবহার করা হয়। মদের বা হিরোইনের বিষক্রিয়া নষ্ট করার জন্য ১ ড্রাম মূল আরক বা মাদার টিংচার ৪ আউন্স বিশুদ্ধ পরিস্রুত মৃদু গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩ বার ২ দিন সেবন করাতে হবে।
অ্যাসাইনাম ক্যানের অন্যান্য ঔষধের সাথে সমন্ধযুক্ত ঔষধঃ-
- কোষ্টবদ্ধতা সহ শোথে বা উদরীতে এপিস-৩।
- উদরাময় এবং শ্বাসকষ্টসহ শোথে অ্যাপোসাইনাম মাদার বা ১ শক্তি।
- সর্বো অঙ্গের শোথে আর্সেনিক অথবা অক্সিডেনড্রন, কোন প্রকার উপকার না হলে লিয়াট্রিস মাদার।
- উদরাময়, অম্ল, বমি বা অম্ল বমি এবং পিপাসাসহ শোথে অ্যাসিড অ্যাসিটিক।
অ্যাপোসাইনাম ক্যানের মানসিক লক্ষণাবলীঃ-
- রোগীর মানসিক বিশৃঙ্খলা, উদভ্রান্ত মানসিক অবস্থা।
- অত্যাধিক স্নায়ুবিক অস্থিরতা বিষন্নভাব, নিরুৎসাহিত।
- বিহব্বল ও নিস্তেজভাব অ্যাপোইনামে বিদ্যমান থাকে।
- রোগীর কথা বলা বা শোনার ইচ্ছা থাকে না ।
- এমনকি সহজে রাগও প্রকাশ করে না।
- শরীরে তন্দ্রালুতা থাকে।
0 Comments