অ্যালো সোকোট্রিনা সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা
অ্যালো সোকোট্রিনা ঔষদি গাছের বর্ণনাঃ-
অ্যালো এক প্রকার গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, কতগুলি সোজা শাখা বিশিষ্ট ডাঁটার সমষ্টি নিয়ে গঠিত। ইহা ১-২ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত উচু হয়। সোজা পাতাগুলি মাংসল বা রসালো হয় এবং ইহার একপ্রান্ত ক্রমশ সরু হয়। ইহার ডাঁটা হয় না কিন্তু অনেক গুলি ঘৃতকুমারী গুল্মের রসালো পাতাগুলি মাটির উপরিভাগ থেকে বের হয়ে চারদিকে ছরিয়ে পরে। উপরের দিকে কিছুটা ফাকা ক্রমশ সরু হয়ে উঠে ।পাতাগুলির উভয় দিক কাঁটার মত কিন্তু সমস্ত পাতা জেলির মত রসে পূর্ণ থাকে । এ জাতীয় গুল্ম বিভিন্ন জাতের হয় । যথাঃ- কেপ অ্যালোজ, কিউরাকাউ অ্যালোজ, জানজিবার অ্যালোজ, সোকোট্রিনা অ্যালোজ ইত্যাদি ।
অ্যালো সোকোট্রিনা ঔষধ প্রস্তুত প্রণালীঃ-
ঘৃত কুমারী বা সোকোট্রিন অ্যালোর পাতার ঘণীভূত রস চূর্ণ করে নিংরিয়ে সংগ্রহ করা হয় । সেই ঘণীভূত রসের ৫-গুণ ওজনের তীব্র পারস্রুত সুরাসারের সাথে মিশ্রিত করে মূল অরিষ্ট বা আরক প্রস্তুত করা হয় । হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুসারে পরিস্রুত সুরাসারের সাথে মিশ্রিত করে ইহার শক্তি প্রস্তুত করা হয় ।
অ্যালো সোকোট্রিনার বৃদ্ধি বা উপচয়ঃ-
অতি প্রত্যুসে থেকে সকাল বেলা ৮-৯ টা পর্যন্ত , অতিশয় গরম ঘরে ও গরম কালে , শুষ্ক ও গরম এবং স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়, চর্মপীড়া শীতকালে , পানাহারের পর , উষ্ণ বায়ুতে দাঁড়ালে, চলাফিরা করলে বৃদ্ধি পায় ।
অ্যালো সোকোট্রিনার হ্রাস বা উপশমঃ-
ঠান্ডা আবহাওয়া শীতল পানিতে,শীতল ও নির্মল বায়ুতে। বায়ু ও মল নির্গমনে।
অ্যালো সোকোট্রিনা-র রোগীর লক্ষণসমষ্টি ঃ-
€ বহুদিন যাবৎ বিভিন্ন সদৃশ বা অসদৃশ বিধানের ঔষধ সেবনের ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোগের এবং ঔষধের লক্ষণগুলি মিলে মিশে দৈহিক ও মানসিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে, এ অবস্থায় অ্যালো প্রয়োগে শারিরিক ও মানসিক বিধানের শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
€ মলদ্বারের দুর্বলতার কারণে মলদ্বারের পেশি বা স্ফীংটার (Anal sphincter) এতই দুর্বল যে , বায়ু নি:শরণ হয় বেশী; কিন্তু মলের ভাগ অল্প। নি:সৃত বায়ুতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ। মল ও বায়ু বেরুলেও পেটটি আগের মতোই বায়ু ভর্তি থাকে।
€ পানাহারের পরেই পায়খানার বেগ, তাই তাড়াহুড়ো করেই পায়খানায় ছোটে। মলদ্বার যেন খোলা এবং প্রাতে বিছানা ছাড়ার পূর্বই পায়খানার বেগ। প্রাতকালে উদরাময়।
€ মাথা ব্যথার সাথে সাথে কোমর ব্যথা। পর্যায়ক্রমে কোমর ব্যথার সাথে সাথে অর্শ রোগ অথবা পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা ও থাকে।
€ লিভার, সরলান্ত কিংবা জরায়ুর পীড়ায় ঐ সমস্ত অঙ্গে রক্ত জমা হয়ে ফুলা ফুলা ভাব থাকে।
€ বাহ্যের পূর্বে পেট গড়গড় শব্দ করে ও ডাকে এবং হঠাৎ বাহ্যের বেগ। বাহ্যের পর দুর্বলতা ও মূর্ছারভাব।
€ প্রতিবছর শীতকালে কাশি, প্যাচড়া ও চুলকানি।
€ অর্শ পীড়ায় আঙ্গুর ফলের থোকার মতো অর্শের বলি বের হয়।
€ অর্শের বলি নীলচে।
€ সর্বদাই মলদ্বারে ঠেলা মারার মতো ব্যথা।
€ মলদ্বার গরম, জ্বালা করে, চুলকানি ও রক্তস্রাব হয়।
€ অর্শের যন্ত্রনা ঠান্ডা পানিতে উপশম।
€ রোগী গরম কাতর, কষ্টকর লক্ষণগুলি গরমে বৃদ্ধি পায়।
€ হাঁটার সময় প্রতিবার পা ফেলতে মাথায় যন্ত্রনা, চোখে ভাড়ীবোধ হয়।
€ শরীরের চর্ম শুষ্ক, জ্বালাযুক্ত বিশেষত পায়ের তলায় জ্বালা ও গরম অনুভূতি হয়। তাই পা দুটি আচ্ছাদন বস্ত্রের বাহিরে রাখে।
€ রক্ত, ডাক্তার, হাসপাতাল, উঁচু স্থান দেখলে ও একা থাকলে ভয় পায়।
অ্যালো সোকোট্রিনা র প্রয়োগ ঃ-
কোন ঔষধ ক্রুড অবস্থায় ও স্থূল মাত্রায়, দীর্ঘদিন সেবন করলে রোগের এবং ঔষধের লক্ষণ মিশ্রিত হয়ে যায়। যখন শরীরের মধ্যে গোলমাল সৃষ্টি হয়, তখন শারিরীক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য ইহা উৎকৃষ্ট ঔষধ। এজন্য রোগীর উদরাময়, কোষ্ঠবদ্ধতাও শূল-বেদনা, আমাশয়, অর্শ, ভগন্দর, রক্তামাশয়, শ্বাস-যন্ত্রের পীড়া, জরায়ুর দুর্বলতা, কলেরা, মাথা-ব্যথা, কোমরে বাত, ক্ষয়কাশ, চর্মপীড়া, পাকস্থলীর পীড়া ও যকৃতের রক্তাধিক্য জনিত পীড়া ইত্যাদি দেখা দেয় এবং এগুলোতে অ্যালো সোকোট্রিনা ব্যবহার করা হয়। বৃদ্ধ, শ্রমক্লিষ্ট, শ্লেমা প্রধান ব্যক্তি ও পুরাতন মদপানকারীদের পক্ষে অ্যালো সোকোট্রিনা ঔষধ টি বিশেষ উপকারী।
বিশেষ প্রয়োজনে যোগাযোগ
0 Comments