অ্যান্টিমোনিয়াম ক্রূডাম এটি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন
নিচে এই “অ্যান্টিমোনিয়াম ক্রূডাম” মেডিসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
অ্যান্টিম ক্রূডের বর্ণনাঃ-
অ্যান্টিম ক্রূড , ক্রূড আকারে খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়। দ্রবনের সাহায্যে ইহাকে বিশুদ্ধ করা হয় । স্ফটিকার উজ্জ্বল এই পদার্থ জলে অদ্রবণীয়, কিন্তু কেন্দ্রীভূত গরম হাইড্রোক্লোরিক এসিডে যখন হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুত হয় তখন ইহা দ্রবীভূত হয়। কাঠ কয়লার উপর তাপ দেওয়া হলে ইহা গলে সালফার অক্রাইডের উৎক্ষিপ্ত সাদা বাষ্পে পরিণত হয়।((Antimonium Crudum)
অ্যান্টিম ক্রূডের প্রুভারঃ-
1828 সালে মহাত্ম্যা ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তার একজন শিষ্য ক্যাসপেরীকে সঙ্গে নিয়ে অ্যান্টিম ক্রূড প্রুভ করেছিলেন। ((Antimonium Crudum)
অ্যান্টিম ক্রূডের প্রস্তুত প্রণালীঃ-
1-ভাগ ওজনের বিশুদ্ধ অ্যান্টিমোনিয়াম সালফাইডের সাথে 9-ভাগ ওজনের দুগ্ধ শর্করা মিশ্রিত করে ইহার বিচূর্ণ 1-শক্তি প্রস্তুত করা হয়। 6-ভাগ পর্যন্ত বিচূর্ণ শক্তি প্রস্তুত করার পর তার পর ইহার বিচূর্ণকে তরল ক্রমে পরিণত করা হয়।((Antimonium Crudum)
অ্যান্টিম ক্রূডের ক্রিয়াস্থলঃ-
অ্যান্টিম ক্রূডের প্রধান ক্রিয়াস্থান বা ক্রিয়াস্থল হলো- মন, পাকস্থলী, স্নায়ু, ফুসফুস, চর্ম ও পদতল ইত্যাদি। অ্যান্টিম ক্রূডের ক্রিয়ার কারণে অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি শ্লেমা পূর্ণ হয়ে পরিপাক ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়। ((Antimonium Crudum)
অ্যান্টিম ক্রূডের রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ-
অ্যান্টিম ক্রূড একটি অ্যান্টিসোরিক ঔষধ। মোটা ও চ্যাপ্টা ধরণের দেহ, বাত প্রধান শিশু, নারী-পুরুষ। যাদের সূর্যের তাপ সহ্য হয় না, রৌদ্রে কাজ করলে, রৌদ্রে হাঁটলে ও অসুস্থ হয়ে যায়। খুব শীতল পানিতে গোসলে, সাঁতার কাটলে বা ঠান্ডা বরফে হাঁটাহাটি করে পীড়া হলে, রোগী উভয় কাতর। রোগীর মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে। সমস্ত জিহবা দুধের মতো সাদা ময়লাবৃত। অতিরিক্ত আহারের ফলে, পরিপাক ক্রিয়ার বন্ধের কারণে ক্ষুদা ও তৃষ্ণার অভাব। ভূক্ত দ্রব্যের আস্বাদযুক্ত ঢেকুর উঠে ও রোগীর পেট দম-সম বন্ধ হয়ে থাকে। পাকস্থলীর বিশৃঙ্খলা দেহের যে কোন সঙ্গে হতে পারে। টক দ্রব্য বা খাদ্য খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা। উল্লিখিত সমস্ত অবস্থায় অ্যান্টিম ক্রূড একটি সুনির্দিষ্ট ঔষধ। ((Antimonium Crudum)
অ্যান্টিম ক্রূডের রোগীচিত্র বা বিশিষ্ট লক্ষণসমূহঃ-
# ছেলে রোগীরা তাড়াতাড়ি স্থূলদেহ হয়, অত্যন্ত রাগী, বিরক্তভাব ও অতিরিক্ত খিটখিটে এবং খুঁতখুঁতে মেজাজ। পূর্ণ বয়স্করা সদা মনমরা, দু:খিত ও রুষ্ট, কথায় কথায় কান্না করে।
# শিশুদের ও বৃদ্ধদের বমি বমি ভাব, ক্ষুদা ও তৃষ্ণার অভাব, গোসলে অনিচ্ছা, বাত প্রবণতা, জিহবার উপর পুরু প্রলেপ ইত্যাদি প্রধান লক্ষণ।
# অধিক শীতে বা ঠান্ডায় বা ঠান্ডা পানিতে কিংবা অত্যাধিক গ্রীষ্মকালে বা গরমে বা রৌদ্রের তাপে পীড়ার বৃদ্ধি।
# দেহের যে কোন রোগের সঙ্গে পাকস্থলীর বিশৃঙ্খলা থাকেই। যেমন- পর্যায়ক্রমে বাতের ব্যথা ও পেটের গোলমাল। পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতাও এবং প্রাতকালীন উদরাময়। দুধ,ঘিরে,মিষ্টি, গোস্ত প্রবৃদ্ধি ভূরিভোজনজনিত পেটের রোগ।
# যেখানে ব্যথা থাকা স্বাভাবিক সেখানে ব্যথা থাকে না। ব্যথা ডানদিকে থেকে বামদিকে যায়।
# আহারে অনিচ্ছা তবে অম্ল-দ্রব্য খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা কিন্তু অম্ল-দ্রব্য পানাহারে সহ্য হয় না।
# রোগী অসুস্থ হয়ে যায়, যা খায় তার ঢেকুর উঠে।
# রৌদ্রতাপ বা প্রচন্ড গরম সহ্য হয় না অথচ বেদনাযুক্ত স্থানে গরম প্রয়োগে ব্যথ্যা-বেদনার উপশম হয়।
# পায়ের তলায় শৃঙ্গবৎ কড়া ও বেদনা , সেজন্য হাঁটতে-চলতে কষ্ট হয়।
চর্মরোগে বা একজিমায় অ্যান্টিম ক্রূডের ব্যবহারঃ-
মুখে, কানে, নাকে, গন্ডদেশে, দাড়িতে ও মাথার মধ্যে একজিমা, ফোড়া কিংবা ফোষ্কার মতো উদ্ভেদ। উদ্ভেদে পুঁজ থাকে এবং মামড়িপূর্ণ। চর্ম পুরু, শক্ত, মধুর বর্ণযুক্ত মামড়ি, বিছানার গরমে চুলকায়। উদ্ভেদে চুলকানি ও জ্বালা-যন্ত্রনা এবং রাত্রিকালে বৃদ্ধি। ঠান্ডা পানিতে গোছলে অথবা রৌদ্রতাপে বা গরমে ঘেমে চর্মরোগের বৃদ্ধি। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি ও চামড়ার মিলনস্থল ফাটা ফাটা। পর্যায়ক্রমে একজিমার বা চর্মউদ্ভেদের সাথে পাকাশয়ের গোলমাল । চর্মের উপর লাল বর্ণের মাংসল পুঁজবটি বের হয় এর্বং প্রদাহ থাকে। ((Antimonium Crudum)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- পায়ের তলায় শৃঙ্গবৎ কড়া ও বেদনা , সেজন্য হাটতে-চলতে কষ্ট হয়।
0 Comments